তারাবির নামাজের নিয়ম - তারাবির নামাজের নিয়ত, দোয়া

প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই তারাবিহ নামাজের নিয়ম তারাবিহ নামাজের দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান, আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করা যাই আপনি তারাবিহ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত

রমজান মাসে তারাবিহ নিয়ে আমাদের অনেক কৌতূহল তবে আমরা অনেকেই তারাবিহ নামাজ কিভাবে পরতে হয় জানিনা চলুন আজকে তারাবির নামাজের নিয়ম, তারাবিহ নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ তারাবির নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ইত্যাদি 

ভূমিকা

এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাকে জানানর চেষ্টা করবো তারাবিহ নামাজ সম্পর্কে, তারাবির নামাজের নিয়ম তারাবিহ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে, তারাবিহ নামাজের দোয়া, তারাবিহ নামাজের মোনাজাত সম্পর্কে আরবি ভাষাই বাংলা আনুবাদ এবং বাংলা অর্থসহ দেখানো হবে। এছাড়াও তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত পরতে হয় সে সম্পর্কে হাদিসে কি বলা আছে সব কিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আমাদের এই পোস্টটিতে।

তারাবির নামাজের নিয়ম

“তারাবিহ” এটি আরবি শব্দ । তারাবিহ শব্দের অর্থ মূলত “রাহাতুন” অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবির নামাজকে অন্য ভাষাই কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জতের নামাজ ও বলা হয়ে থাকে। তারাবির নমাজকে আরামের নামাজ বা বিশ্রামের নামাজ বলার কারন হলো এই নামাজ প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছুক্ষণ বসে একটি দোয়া পাঠ করা হয় এই জন্য একে তারাবিহ বা আরামের নামাজ বলা হয়।

এবারে আসুন তারাবির নামাজের নিয়ম- তারাবির নামাজ মূলত এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ এবং ২ রাকাত সুন্নত নামাজের পরে আদায় করা হয়। তারাবির নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়তে হয় এবং চার রাকাত পর কিছুক্ষণ বসে একটু দোয়া পাঠ করতে হয়। চার রাকাত পর অল্প কিছুক্ষণ বসে থাকার জন্য এ নামাজের নাম হয়েছে তারাবির নামাজ বা আরামের নামাজ।

আপনি চাইলে জামাতের সাথে তারাবির নামাজ পড়তে পারেন আবার একা একাও পড়তে পারেন। তারাবির নামাজ মূলত সুন্নত। জামাতের সাথে তারাবির নামাজ পড়লে নিয়ত করবেন তারপরে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম পড়বেন এবং ছানা পরবেন এবং ইমামের করা তেলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনবেন।

তারাবির নামাজের নিয়ত

তারাবির নামাজ বা যেকোনো নামাজের পূর্ব শর্ত হলো নিয়ত নিয়ত ছাড়া আমল হবে না আর নিয়ত হলো মনের ইচ্ছা নাম। তবে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে তারাবির নামাজে নিয়ত কোথাও নাই (শায়খ_আহমাদুল্লাহ) যে কোন আমল বা নামাজের জন্য আপনার অন্তরের ইচ্ছা আগ্রহ টাই আপনার নিয়ত, তবে কিছু নিয়ত আছে প্রচলিত চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।

তারাবির নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

বাংলা উচ্চরনঃ আপনি যদি জামাতের সাথে নামাজ পরেন তবে, "নাওয়াইতুআন উসালি­য়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম রাসুলিল্লাহি তাআ’লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা উচ্চরনঃ আপনি যদি একা একা তারাবির নামাজ আদায় করেন তবে, "নাওয়াইতুআন উসালি­য়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। ( আপনি একা একা নামাজ আদায় করলে নিয়তের সময় "ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম" এটা বলতে হবে না।

বাংলা অর্থঃ জামাতে পড়লে "আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার"।

বাংলা অর্থঃ একাকি পড়লে জামাতে না পড়লে "আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার"। এখানে কতটুকু পড়তে হবে না আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

৪ রাকাআ’ত এর পরে তারাবির নামাজের দোয়া

তারাবির নামাজের দোয়া বলতে মূলত তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর যে দোয়া পাঠ করা হয় সেটাকে বোঝাই দুই রাকাআ’ত, দুই রাকাআ’ত করে ৪ রাকাআ’ত নামাজের পরে দোয়াটি পাঠ করা হয় চলুন দোয়াটি জেনে নেওয়া যাক।

আরবি ভাষাই দোয়াঃ

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

বাংলা উচ্চারণঃ " সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ "

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র, পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি সম্মান, মর্যাদা, মহত্ত্ব, সর্বোত্তম ক্ষমতাশীল ও করুণাময় সত্তা। তিনি প্রবিত্রময়, সকল শক্তির মূল মহিমান্বিত সেই চিরজীবন্ত সত্তা যিনি নিদ্রিত হন না এবং কখনও মৃত্যুবরণ করেন না, তাঁর মহিমাময়, পবিত্রময় বরকতময় , আমাদের পালনকর্তা, এবং ফেরেশতা এবং আত্মার পালনকর্তা

আমাদের মধ্যে অনেকেরি ভুল ধারনা থাকতে পারেন যে তারাবিহ নামাজের এই দোয়া না পড়লে নামাজের কোন ক্ষতি হয় কিনা? দুরাকাত করে চার রাকাত নামাজের পর দোয়াটি না পড়লে নামাজের কোন সমস্যা হয় না এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এই দোয়ার সাথে নামাজ হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।

তারাবির ৪ রাকাত নামাজের পরে এই দোয়াটি পড়ে উত্তম তবে আপনি চাইলে অন্য কোন দোয়া পাঠ করতে পারেন আপনি চাইলে ইস্তেগফার সহ অন্য দোয়া পাঠ করতে পারেন এটাতেও আলেমদের মতামত রয়েছে। তবে হাদিসের-কুরআন এর বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া সর্বোত্তম।

তারাবির নামাজের মোনাজাত

আমাদের দেশে সাধারনত ২০ রাকাআ’ত তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। এবং নামাজ শেষে মোনাজাত করা হয় সেটা অন্য সকল নামাজের মতো নয়। এই নামাজের নিদিষ্ট এক্তি মোনাজাত আছে যেটা সবাই করে থাকে চলুন তবে যেনে নেওয়া যাক কি সেই মনাজাত_

আরবি ভাষাই মোনাজাতঃ

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ - اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

মোনাজাতর বাংলা উচ্চরনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।”

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে জান্নাত চাই এবং আমরা তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই, হে জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টিকর্তা - তোমার রহমতে, হে পরাক্রমশালী, হে ক্ষমাশীল, হে উদার, হে পর্দা, হে আমার করুণা হে পরাক্রমশালী, হে সৃষ্টিকর্তা, হে পরম করুণাময় - হে আল্লাহ, আমাদেরকে আগুন থেকে বাঁচাও, হে রক্ষাকারী, হে রক্ষাকারী, হে রক্ষাকারী - তোমার রহমতে, হে পরম করুণাময়।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল জানতে চলুন আমরা একটা ঘটনা শুনে নেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) এর জীবনের, সহীহ আল বুখারী তে বর্ণিত আছে যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) তিনি মসজিদে কিয়ামুল লায়িল বা তারাবিহ নামাজ পড়লেন আর লোকজনও তার সাথে পড়লো, পরের দিন খবর ছড়াল, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) দেখলো পুরো মসজিদ ভরা,

তৃতীয় দিনেও একয় ভাবে অনেক লোক আসলো, আর চতুর্থ দিনে যদি মসজিদে অনেক লোক সেদিন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) মসজিদে এলেনা না তারাবিহ নামাজ আদায় করার জন্য। তারপরে তিনি ফজরের নামাজে এসে বললেন, এমন না যে আমি জানিনা মসজিদে তারাবিহ নামাজ আদায় এর জন্য অনেক মানুষ তবে আমি ইচ্ছে করেই আসি নাই তার কারন হলো, আমি চাই না তারাবিহ বা কিয়ামুল লায়িল ফরজ করা হোক।

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, তারাবিহ নামাজ "ফরজ না" কিন্তু ফরজ না হলেও ফরজ ও সুন্নতের মাঝামাঝি ধরা হয় এটা তারাবিহ নামাজ কে "সুন্নতে মুয়াক্কাদা"। তবে সহীহ আল বুখারী তে বর্ণিত আছে যে, " বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) তিনি বলেছেন, যদি কেউ রমজন মাসে রাতের নামাজ মানে তারাবিহ নামাজ আদায় করে ইমানের সাথে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির আশায় তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে ইনশাআল্লাহ। "

তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত এটা বলার আগে বলতে চাই, তারাবিহ নামাজ কি ফরফ, অয়াজিব, সুন্নত, নাকি নফল? তারাবিহ নামাজ মূলত সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা নফল ্বলা যেতে পারে। তারাবিহ নামাজ ফরজ না তাই আপনি ৮ রাকাত থেকে শুরু করে যত ইচ্ছে পরতে পারেন।

তবে সহীহ আল বুখারী তে বর্ণিত আছে যে, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)– বলেছেন রমজানে এবং অন্যান্য সময়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) কে তিনি ৪ রাকাত তারপরে ৪ রাকাত এবং তারপরে ৩ রাকাত পরতে দেখেছেন। কিন্তু ২০ রাকাত তারাবিহ ওমরে ফারুক (রা.) থেকে বিশুদ্ধ ভাবে প্রমানিত আছে।

আমাদের দেশে অনেক মতভেদ আছে তারাবিহ নামাজ কতো রাকাত সে সম্পর্কে এখন আপনাদের সামনে সলক ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে এখন আপনি আপনার ইচ্ছে মত আমল করবেন আপনি যোতটা পারেন। আমাদের দেশে তারাবিহ নামাজ নিয়ে যে ফিতনা হয় সেটা আপনি করবেন না আশা করা যাই।

লেখকের মন্তব্য

রমজান মাস আমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্যতম রহমত। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা.) বলেন ওইলোক ধংস হোক যে রমজান মাস পেল কিন্তু আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করে নিজের গুনাহ মাফ নিতে পারলো না। আসুন আমরা রমজানের যথাযত হক আদায় করার চেস্টা করি ইনশাআল্লাহ। সমাজের অসহায় গরিব মিসকিনদের পাশে দাড়াই।

আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই একটা কমেন্ট করবেন এবং আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং আমাদের পোস্টের মধ্যে কোথাও আপনার ভুল মনে হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে বা whatsapp এ জানাবেন। বাংলায় আরও সকল ধরনের তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য ভালো থাকবেন আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url